সানজিদা আক্তার দিনা ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারে অসুস্থ মা আর বাবা রয়েছে। দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। পিতা গিয়াসউদ্দিন কর্মহীন গত ৯ মাস যাবৎ। এছাড়া পিতার বয়সও হয়েছে।
কর্মহীন পিতার পরিবারে অন্যকোনও উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় আত্মীয় স্বজনের সহায়তা আর মানুষের কাছ থেকে চেয়ে কোনও রকমে সংসার চলছিল। এরই মাঝে বহুকষ্টে সানজিদা আক্তার তার পড়ালেখা টিকিয়ে রেখেছিল। অসুস্থ মায়ের সেবা করতে করতে তার মনে একসময় একটা স্বপ্ন জাগে বড় হয়ে ডাক্তার হবার। পরিবারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে, মনের ভেতরেই সে স্বপ্ন রেখে দেয় সানজিদা।
আরও পড়ুন: গণপরিবহন চলাচলে ফরিদপুরে পরিবহন শ্রমিকদের স্বস্তি
ছাত্রী হিসেবে মেধাবী সানজিদা আক্তার ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২০ সালে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পায়। পাশ করার পর শুরু হয় নতুন বিড়ম্বনার। সংসারই যেখানে চলে না, সেখানে তার উচ্চশিক্ষা দুঃসাধ্য।
তবুও থেমে থাকেনি সানজিদা। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। বহুকষ্টে কিছু অর্থ সংস্থান করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। মনের সুপ্ত স্বপ্ন আর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, এরই মাঝে অসম্ভব সম্ভাবনার স্বপ্ন বাস্তব হিসেবে দেখা দেয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে। সানজিদা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে চান্স পায়। কিন্তু বিধি বাম, ভর্তি এবং বইপুস্তক কেনার মত টাকা তার পরিবারের দেয়ার উপায় নাই।
আরও পড়ুন: করোনার মধ্যে ফরিদপুরে মার্কেটগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
চরম দুচিন্তায় সময় যাচ্ছিল সানজিদার পরিবারের। এরই মাঝে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করতে বলেন এক পরিচিত ব্যক্তি। তার কথামত রবিবার (৯ মে) অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসায় যায় সানজিদা। ভর্তি ও বই কেনার জন্য সাহায্যে আবেদন করে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি, বই কেনা ও প্রাথমিক খরচের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেন। একই সাথে তার ভবিষ্যতে তাকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিক গুরুতর আহত, ঢামেকে স্থানান্তর
জেলা প্রশাসকের তাৎক্ষণিক এই সেবায় আবেগ আপ্লুত সানজিদার বাবা গিয়াসউদ্দিন বলেন, কোন উপায় ছিল না। ভর্তির সময়ও খুব নেই। এই উপকার পেয়ে আমার মেয়ের জীবনটাই পাল্টে যাবে। ওর স্বপ্নপূরণে ডিসি স্যার যে সহযোগিতা করলেন, তার ঋণ কোন দিন শোধ হওয়ার নয়। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে আমার মেয়েও প্রকৃত মেধাবীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সানজিদা বলেন, আমার স্বপ্নপূরণে সারথি হয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। অতুল স্যার (জেলা প্রশাসক) যেভাবে আমাকে দ্রুততার সাথে সহায়তা করলেন আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি কেউ এভাবে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, আমি ভর্তি হওয়ার চিন্তায় দুদিন যাবত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আজ থেকে আমার চিন্তা দূর হলো। আমি চেষ্টা করবো ডাক্তার হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে। আর আমার পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবেন আজকের ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্যার।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, অর্থের অভাবে একটি মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে এটা কখনো কাম্য নয়। সানজিদার ভর্তির জন্য আপাতত যে পরিমাণ অর্থের দরকার ছিল, তার বাবার হাতে তা তুলে দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো মেধাবী মুখ যেনও ঝরে পড়তে না পারে তার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। শিক্ষা প্রসারসহ যে কোনো মানবিক সহায়তা প্রদানে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে এবং আগামীতেও থাকবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সুশাসনে গড়ি, সোনার বাংলা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের কথা শুনে তাদের সেবা দিতে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’